Take a fresh look at your lifestyle.

জাল টাকা দিয়ে লিচু কিনতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক পোশাক কারখানার মালিকসহ ২ জন

0

নিজস্ব প্রতিবেদক :

স্থানীয়দের কাছে প্রতিষ্ঠানটি পোশাক কারখানা হিসেবে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটিতে জিনসের শার্ট-প্যান্ট তৈরি করা হতো। একসময় সেখানে ১৫০–২০০ শ্রমিক কাজ করতেন। কারখানাটি করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। সেই পোশাক কারখানাটির কয়েকটি কক্ষে মালিক নিজেই জাল টাকা বানানো শুরু করেন। আজ বুধবার সেই জাল টাকা দিয়ে লিচু কিনতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি।

ঢাকার অদূরে সাভারের বনগাঁ ইউনিয়নের সাদাপুরের পুরানবাড়ি এলাকায় ‘সাউথ বেঙ্গল অ্যাপারেলস’ নামের কথিত পোশাক কারখানায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ ৫০ লাখ জাল টাকা জব্দ করে পুলিশ। আটক করা হয় দুজনকে। এর আগে ‘অন্ধ মার্কেট’ এলাকায় জাল টাকা দিয়ে লিচু কেনার অভিযোগে কারখানার মালিক সাখাওয়াত হোসেন খানকে আটক করে সাভার মডেল থানা-পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, আটক সাখাওয়াত হোসেন খান (৫০) বরিশালের মুলাদী উপজেলার ডিগ্রিরচর খান বাড়ির বাসিন্দা। আটক অন্য দুজন হলেন মুলাদীর বয়াতিকান্দি গ্রামের নাজমুল হোসেন (২৪) ও শরীয়তপুরের পালং থানার গয়াধর গ্রামের সুজন মিয়া (৩০)।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজ সকালে কারখানার মালিক সাখাওয়াত সাভারের ‘অন্ধ মার্কেট’ এলাকায় লিচু কিনতে যান। লিচু বিক্রেতাকে এক হাজার টাকার একটি জাল নোট দিলে নোট দেখে বিক্রেতার সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাখাওয়াতকে আটক করে সাভার মডেল থানা-পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ১৭ হাজার টাকার জাল নোটসহ সাখাওয়াতকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি সাভারের সাদাপুরের পুরানবাড়ি এলাকায় তাঁর মালিকানাধীন ‘সাউথ বেঙ্গল অ্যাপারেলস’ নামের পোশাক কারখানার ভেতরে জাল টাকা বানানোর কথা স্বীকার করেন। পরে পুলিশ ওই কারখানায় গিয়ে আরও দুজনকে আটক করে। এ সময় কারখানা থেকে ১ বোতল বিদেশি মদ, একটি বিয়ারের ক্যান ও ১০০টি ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ।

কারখানার ঠিক পাশেই একটি বাসায় ভাড়া থাকেন মহিমা খাতুন (৪০)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ এলাকায় ৮ বছর ধরে থাকি। দুই বছর হলো এই বাসা ভাড়া নিছি। আগে কারখানায় জিনসের শার্ট, প্যান্ট বানাইত। আগে দেড়-দুই শ লোক কাজ করত। করোনার পর থিকা ৬-৭ জন কাজ করে। কী কাজ করে, আমরা জানতাম না।’

আরেক বাসিন্দা ইব্রাহীম খান (৫০) বলেন, কারখানার মালিক করোনার পর কয়েক দিন পাশেই গরুর খামার করেছেন। এরপর কারখানায় মাঝেমধ্যে শব্দ শুনতে পান। কিন্তু কী কাজ হয় জানেন না। কাউকে কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে তিনি জানান।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান। এ সময় ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) আবদুল্লাহ হিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কারখানায় জাল টাকা বানানোর অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে জাল টাকা প্রস্তুতের পর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হতো। মূলত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জব্দ করা ৫০ লাখ ১৭ হাজার টাকা তৈরি করেছিলেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, চক্রের সঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সাবেক এক কর্মকর্তা জড়িত আছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তাঁকেসহ জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

জাল টাকা তৈরির মূল হোঁতা সাখাওয়াত হোসেনের দাবি, ব্যবসায় লোকসানের কারণে তিন ব্যক্তির পরামর্শে চার মাস আগে তিনি জাল টাকা তৈরি শুরু করেন। তিনি বলেন, ২০১১ সালে তৈরি পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এরপর লোকসানের কয়েক বছর পরই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। পাঁচ বছর আগে আবার শুরু করেন। করোনার সময় কার্যাদেশ বাতিল হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। চার মাস আগে ঢাকার তিন ব্যক্তির পরামর্শে জাল টাকা তৈরির কাজ শুরু করেন। তাঁরাই জাল টাকা তৈরির সব সরঞ্জাম দিতেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফি প্রথম আলোকে বলেন, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হবে। ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.