Take a fresh look at your lifestyle.

কার্ড জালিয়াতি চক্র কার্ড ক্লোন করে হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকদের অর্থ

0

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :

আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড জালিয়াতি চক্র কার্ড ক্লোন করে হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকদের অর্থ। এই চক্রটি প্রথমে নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট থেকে হ্যাক হওয়া কার্ডের তথ্য কিনে নেয়। এরপর ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ রিডার রাইটার বা এমএসআর যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি করা হয় ক্লোন কার্ড। নকল সেই কার্ড দিয়ে অনলাইনে পণ্য কিনে পরে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই চক্রটি এভাবে শুধু দেশেই নয়, বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড থেকে অর্থ হাতিয়ে আনছে। সর্বশেষ গত ১৫ নভেম্বর রাজধানীর শান্তিনগর থেকে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেন, চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে তাদের কার্যকলাপের বিস্তারিত তথ্য। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যপ্রযুক্তি ও হ্যাকিং বিষয়ে খুব ভালো জ্ঞান রয়েছে। রাশিয়ান হ্যাকারদের সঙ্গে রয়েছে তাদের নিবিড় যোগাযোগ। তারা আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের প্রত্যয়নের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট থেকে হ্যাক হওয়া ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য কেনে। এরপর সেই তথ্য ব্যবহার করে বানানো ক্লোন (নকল) কার্ড দিয়ে অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করে। সেসব পণ্য বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস বা সমজাতীয় পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে ডেলিভারি নেয়। এসব পণ্য পরে তারা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরমসহ নানা উপায়ে বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করে। আবার হ্যাক হওয়া কার্ডের তথ্য দিয়ে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং বা ক্যাশ পিকআপ সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়।

এর আগে ২০১৪ সালে রাজধানীর গুলশানের একটি আবাসিক হোটেল থেকে এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি। এ সময় ঐ চক্রের প্রধান হোতা পোল্যান্ডের নাগরিক পিওতর পালিয়ে যায়। পিওতর এটিএম বুথ থেকে কয়েক বছর ধরে অন্তত ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ২০১৯ সালে রাজধানীর পান্থপথের একটি হোটেল থেকে ছয় ইউক্রেনীয় নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্য। এর আগে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩০টি দেশের এটিএম বুথ টার্গেট করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় চক্রটি। তারা ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বুথ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিশেষত ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করে তারা অনলাইনে কেনাকাটা করে। তাদের কেনার তালিকায় রয়েছে—বিমান টিকিট, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, প্রসাধন সামগ্রী, পোশাক ইত্যাদি। ডেল ডটকম, এইচপি ডটকম, ওয়ালমার্ট ডটকম ও ম্যাংগো ডটকম থেকে তাদের কেনাকাটার তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী আন্তর্জাতিক কার্ড জালিয়াত চক্রের সদস্যদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে বিদেশিদের আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড হ্যাক করে থাকে চক্রের সদস্যরা। এসব হ্যাকিং করা কার্ড নম্বর বাংলাদেশে অবস্থানকারী চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠানো হতো। কম্পিউটারে প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে হ্যাকিং করা কার্ড নম্বর প্রবেশ করিয়ে তা এমএসআর মেশিনে প্রবেশ করিয়ে নতুন একটি ক্লোন কার্ড তৈরি করা হয়। তারপর এগুলো বিভিন্ন বড় বড় শপিংমল এবং বিশেষ কিছু ব্যবসায়ীর দোকান/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংকের রাখা কার্ড পাঞ্চ করার মেশিনে ব্যবহার করে অর্থ হাতিয়ে নেয়।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা বলেন, বেশ কয়েকটি উপায়ে একটি এটিএম বুথ হ্যাক হতে পারে। বুথের কার্ডের মধ্যে জ্যাকপট নামে একটি বিশেষায়িত ম্যালওয়্যার স্থাপন করে একটি নির্দিষ্ট এটিএম বুথকে তার ব্যাংকের  নেটওয়ার্ক  থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়। এরপর ঐ মেশিন থেকে অর্থ তুলে নেওয়া সম্ভব। আবার এমএসআর মেশিনে তৈরি হয় ক্লোন কার্ড। মানে হুবহু আরেকটি কার্ড তৈরি করা যাবে এবং এ ব্যবস্থাতেও নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্টের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আরেক জনের কাছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.