নিজস্ব প্রতিবেদক :
মাঠে মাঠে ছড়িয়ে আছে সবুজ সবজি। রাতভর এসব সবজির ওপরে শিশির পড়ে সকালের রোদে স্বর্ণালি আভা ছড়ায়। স্বচ্ছ নীল আকাশে ভাসতে থাকা ধবল মেঘ। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য জানিয়ে দেয়, প্রকৃতিতে হেমন্ত চলছে। আসছে শীত। আর শীত মানেই তো সতেজ সবজির সমারোহ।
তবে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকেরা একটু আগেভাগে চাষ শুরু করায় এরই মধ্যে খেত থেকে সবজি তুলতে শুরু করেছেন। ভালো ফলনের পাশাপাশি দামও ভালো পাওয়ায় তাঁরা খুশি।
এ বছর এক একর জমিতে করলা লাগিয়েছেন সদর উপজেলার ইয়াকুবপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন (৪৯)। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিক্রি করে ৯০ হাজার টাকা পেয়েছি। খেতে যে পরিমাণ করলা আছে, তা বিক্রি করে কমপক্ষে আরও এক লাখ টাকা পাওয়া যাবে।’
শহরের সবজির আড়তে ফুলকপি নিয়ে এসেছেন আকচা গ্রামের চাষি জ্যোতিষ রায় (৫১)। তিনি বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে প্রতিটি ফুলকপি ১৫ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এ দরে ফুলকপি বিক্রি করায় লাভবান হয়েছেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছর জেলায় ৬ হাজার ৮৭৮ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৬২ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন।
রোববার সকালে শহরের কালীবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সব ধরনের সবজি উঠেছে। সদর উপজেলার বড়দেশ্বরী, পাটিয়াডাঙ্গী, আকচা, ঢোলারহাটসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নানা সবজিতে সবুজ হয়ে আছে মাঠের পর মাঠ। খেত থেকে সবজি তুলে সড়কের পাশে রাখছেন কৃষক ও শ্রমিকেরা। খেতের পাশ থেকেই পাইকারেরা নগদ টাকায় তা কিনে ট্রাকে তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে।
সদর উপজেলার ঢোলারহাট এলাকায় লাউ কিনছিলেন ঢাকা থেকে আসা পাইকার আবদুল রহিম (৫৫)। তিনি বলেন, মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ঢাকার শ্যামবাজারের সবজির দর জেনে নেন। এরপর এ দামের চেয়ে কিছুটা কমে খেত থেকে সবজি কেনেন। কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিটি লাউ ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে কিনেছেন। পরে তা ট্রাকে করে শ্যামবাজারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এক ট্রাকে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার লাউ ধরে। ট্রাক ভাড়া বাদ দিয়ে এক ট্রাক লাউ বিক্রি করে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ থাকে।
লাউচাষি আবুল হোসেন বলেন, প্রতি মণ লাউ বাজারে নিতে ১০ টাকা করে পরিবহন খরচ দিতে হতো। ইজারাদারদের দিতে হতো মণপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা। খেত থেকেই সব সবজি বিক্রি হওয়ায় সেই ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে।
এসব সবজিখেতে কাজ করে স্থানীয় নারীরাও নিয়মিত আয় করতে পারছেন। বদেশ্বরী গ্রামের মাহমুদা বেগম (৩৮) বলেন, কিছুদিন আগেও এলাকায় নিয়মিত কাজ ছিল না। এখন সবজিখেতে সারা বছরই কাজ পাওয়া যায়। এতে তাঁর সংসার ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলে যায়।
‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ পাওয়া চামেশ্বরী গ্রামের মেহেদী আহসানউল্লাহ চৌধুরী বলেন, এ ঋতুতে চারপাশে সবুজ সবজিখেত দেখে মনটা ভরে যায়।
অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে সবজির ফলন ভালো হয়ে থাকে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, এ জেলায় উৎপাদিত সবজি স্থানীয় প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। এতে কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।